আজঃ বৃহস্পতিবার | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
শিরোনাম

ভয়াল ২১ আগস্ট কাল

পল্লীর আলো ডেস্ক:

বাংলাদেশের ইতিহাসে রক্তাক্ত বিভীষিকাময় আরেকটি দিন ২১ আগস্ট। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে যুদ্ধে ব্যবহৃত গ্রেনেড হামলা চালিয়ে এক নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ ঘটানো হয়। অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও আক্রান্ত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। তাঁর দুই কানের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলার ধরণ ও ঘটনা প্রবাহ থেকে এটা স্পষ্ট যে, শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হত্যা করার মধ্যদিয়ে দলটিকে নেতৃত্ব শূণ্য করায় ছিল ওই হামলার প্রধান লক্ষ্য।

ইতিহাসের সেই বর্বরচিত নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার ১৮তম বার্ষিকী কাল। ওই দিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এসে সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। গ্রেনেড হামলার সময় মানববর্ম সৃষ্টি করে জীবন বাজি রেখে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। কিন্তু শেখ হাসিনাকে প্রাণে রক্ষা করলেও গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রী ও তৎকালীন সরকারের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততায় প্রমাণ মেলে ওই সরকারের প্রত্যক্ষ মদতেই হামলাটি পরিচালিত হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় ২১ আগস্টের ঘটনা: ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের এই ২১ আগস্টের সেদিন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী‘ শান্তি মিছিলের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। সেই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিলের আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। গ্রেনেডের স্লিন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বহু নেতাকর্মীর হাত-পা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ।

সেদিন রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের তিল ধারণের জায়গা ছিল না। হামলায় আওয়ামী লীগের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্লিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক নেতাকর্মীকে তৎক্ষণাৎ দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই দিনের দুঃসহ স্মৃতি।

শেখ হাসিনা গ্রেনেড হামলার পরেও বেঁচে গেছেন দেখে ঘাতকরা তার গাড়ি লক্ষ্য করে ১২ রাউন্ড গুলি করে। তবে গাড়ির কাচ বুলেটপ্রুফ হওয়ার কারণে ঘাতকদের সেই চেষ্টাও ব্যার্থ হয়। হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে। এদিকে হামলার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজে বাঁচতে ও অন্যদের বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ঠিক তখনই পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি-টিয়ার শেল চার্জ করে। একইসঙ্গে নষ্ট করা হয় সেই রোমহর্ষক ঘটনার যাবতীয় আলামত। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় ?পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রত্যক্ষ মদতে ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ও ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিতসহ হেন কোনও কাজ নেই, যা করেনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।

২১ আগস্টের ঘটনায় প্রণ হারান যারা: ২১ আগস্টের রক্তাক্ত ভয়াল ও বর্বরচিত গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন নেতাকর্মী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইভি রহমান সহ ৮ জন মারা যান। সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরও কয়েকজন পরাজিত হন।

আরও দেখুন

ইসলামপুরে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের উদ্বোধন

ইসলামপুর সংবাদদাতা মঙ্গলবার সারাদেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । …