আজঃ বৃহস্পতিবার | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
শিরোনাম

শেরপুরে ঋণের টাকায় বেগুন চাষ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা

শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুরে ঋণের টাকায় বেগুন চাষ করে বিপাকে পড়েছেন অনেক কৃষক। সার তেল কীটনাশক ও শ্রমিকের দাম বেশী থাকায় এবার বেগুনের উৎপাদন খরচ অনেক বেশী পড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী দাম পাওয়া যাচ্ছেনা। কৃষকদের আশা ছিলো ঋণ পরিশোধ করে লাভের টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করে অবশিষ্ট টাকায় সংসার চালাবেন। কিন্তু বেগুনের দাম কমে যাওয়ায় এখন খরচের টাকাও উঠবেনা। এমতাবস্থায় সংসারই চালাবেন কিভাবে? ঋণ পরিশোধ করবেন কিভাবে?
কৃষকরা জানান, মওসুমের শুরুতে বেগুনের দাম ভালো থাকলেও বর্তমানে দাম একেবারে কমে গেছে। পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে ৩শ থেকে ৪শ টাকা মন দরে বেগুন ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। কৃষকদের দাবী সার, তেলসহ অন্যসব জিনিষের দাম বেশী। বেগুনের দাম কমপক্ষে ৮শ টাকা হলে তাদের পোষাতো। এ অবস্থায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
শেরপুর সদর উপজেলার ৬নং চরের ষাটোর্ধ্ব আব্দুল জব্বার ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৫০ শতাংশ জমিতে বেগুনের চাষ করে বিপাকে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার চার ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে সবাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। ছোট ছেলেডারে নিয়ে কষ্টে সংসার চালাই। এবার বেগুনের চাষ করলাম। তেল ষাড়ের দাম বেশী। কত কষ্ট করলাম। মনে করলাম বেগুন বেইচা ঋণ পরিশোধ করবো। কিন্তু দাম না থাকায় এহন খরচের টাকাই তো উঠবো না। ঋণ পরিশোধ করবো কি দিয়ে আর সারাবছর খাবোই কি?
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি রবি মওসুমে শেরপুর জেলায় নয় হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে দুই হাজার হেক্টর জমিতে করা হয়েছে বেগুনের আবাদ। আর এর বেশির ভাগ বেগুন চাষ হয় চরাঞ্চল গুলোতে। এসব জমিতে বেগুন চাষ করে শেরপুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
৭নং চরের বেগুনচাষী মুকুল মিয়া জানান, আমরা যে জিনিস কিনতে যাই সেটার দাম বেশী। আর যখন বেচবার যাই তখন দাম কম। তাহলে আমরা বাচবো কিভাবে? সার, তেল, কীটনাশকের দাম বেশী! কামলার দামও বেশী!
চরশেরপুরের মাইনুল হোসেন বলেন, বেগুনের দাম প্রতিমন ৭শ টাকার মত খরচই হয়। বেচতাছি ৩শ সাড়ে ৩শ টাকা মন। তাইলে এখন আমরা কি করে সংসার চালামু। বেগুনের দাম নাই। তাই টাল আর করমু না। টাল ভাইঙ্গা ফালাইতাছি।
এদিকে পাইকাররা জানান, ঢাকাসহ অন্যস্থানে বেগুনের দাম কমে যাওয়ায়, তারাও কমদামেই বেগুন ক্রয় করছেন। এতে তাদের কিছু করার নেই।
কারওয়ান বাজারের পাইকার নাজমুল বলেন, বেশি টাকা লাভ থাকে না। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ৩শ থেকে ৪শ টাকা মন দরে বেগুন কিনি। এদিকে রাস্তাঘাটও ভালো না। ঘোড়ার গাড়ী দিয়ে আনতে হয়। আবার গাড়ী ভাড়া দিয়ে খরচ বেশী পড়ে। ঢাকা নিয়ে খরচ বাদে কিছু লাভ হয়। ঢাকায় ৫শ থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা মন দরে বিক্রি করি। এখন বাজার কম তাই আমরাও কম দামেই কিনি।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক কৃষিবিদ শুকল্প দাস জানান, শুরুর দিকে বেগুনচাষীরা ভালো দাম পেয়েছেন। এখন সারাদেশ থেকে প্রচুর বেগুন বাজারে আসছে। যার কারণে বেগুনের দাম কিছুটা কমে এসেছে। মধ্যস্বত্যভোগীদের কারণে কৃষকরা প্রকৃত দাম পাচ্ছেননা। এজন্য কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে সরাসরি কৃষকদের মাধ্যমেই বেগুন বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করার কথা ভাবছি আমরা। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারী ভাবেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও দেখুন

ইসলামপুরে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের উদ্বোধন

ইসলামপুর সংবাদদাতা মঙ্গলবার সারাদেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । …