আজঃ শুক্রবার | ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
শিরোনাম

হারিয়ে যাওয়া জারিগান শেরপুরে এখনো জনপ্রিয়

হাফিজুর রহমান লাভলু:
শীতকালে একটা সময় শেরপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসতো গ্রামীণ জারির আসর। যেখানে কখনো ঐতিহাসিক কল্পকাহিনী আবার কখনো সমাজে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হতো জারির আসরে। যা জনপ্রিয় ছিলো গ্রামীণ মানুষের কাছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে এতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এখনো কমেনি এর জনপ্রিয়তা।
মাঝখানে দোহারি, বাদক দল, তারপর গোলাকার ফাকা জায়গা। এর চারিপাশে দাড়িয়ে ও বসা থাকে হাজারো দর্শক। ফাকা জায়গায় গোঙ্গর পায়ে নেচে গেয়ে গান গায় বয়াতি। আর তার সামনে ছেলে থেকে মেয়ে সেজে নৃত্য দিয়ে বাড়তি আনন্দ জোগায় দর্শকদের। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে অভিনয়ও। আধুনিক যুগেও এমন নাচ গান শুনে ও দেখে অনেক আনন্দ পায় এলাকাবাসী।
আমন ধান ঘরে তোলার পর একসময় সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার পাড়া মহল্লায় প্রতিনিয়তই হতো খোলামঞ্চে নাটক, গান ও জারি গান। এসব গান-বাজনা শুনে আনন্দ পেতো গ্রাম বাংলার মানুষ। কিন্তু ইউটিউব ও আধুনিক যুগের বিভিন্ন মিডিয়ার কারণে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জারিগান প্রায় হারিয়েই গেছে। কিন্তু এর জনপ্রিয়তা এখনো কমেনি। শুক্রবার রাতে শেরপুর পৌরসভার মোবারকপুর মহল্লায় এমন এক জারি গানে উপস্থিত দর্শকরা জানান তাদের ভালো লাগার কথা। আর এই আসরকে কেন্দ্র করে উপস্থিত হয় হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশু।
শেরপুর পৌরশহরের আখেরবাজার মহল্লার মোশাররফ হোসেন মশ বলেন, আগে রাত জেগে গ্রামীণ জারি গান আমরা খুব দেখতাম। এখন এইগুলা সচারাচর দেখা যায় না। শীত আসলে বিভিন্ন জায়গায় জারিগানের আসর হইতো। এইগুলা দিন দিন হারিয়ে যাইতাছে। আমাদের উচিত জারি গানকে বাচিয়ে রাখা। ইউটিউব ও ফেইসবুকের কারণে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জারিগান প্রায় হারিয়েই গেছে।
মোবারকপুরের যুবক রাসেল মিয়া বলেন, মনোমুগ্ধকর ও মনের খোরাক প্রাচীণ এই জারির আসর। এখন জারির আসর হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা বাপ- দাদাদের কাছে শুধু শুনি। কিন্তু এখন দেখতে পায় না। আমরা চাই পুরনো সংস্কৃতি চালু রাখতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হোক।
চরশেরপুর ইউনিয়নের মোঃ মালেক মিয়া বলেন, আমরা আগে বাপ- পোলা মিইল্লা মেলা দুরে দুরে জাইয়া জারি দেখতাম। এহন আর হয়না সবখানো। অনেক মজা কইরা দেখতাম। মোবাইল আইয়া সব ওইঠা পরতাছে।
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার পশ্চিম টাঙ্গারপাড়া এলাকার বাস্তব ঘটনার অবলম্বে ‘দুই বিয়ে করার কুফল’ সম্পর্কে ‘জিরেতন সুন্দরী’ নামে এই জারির আসর অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীবরদীর ভেলুয়ার জিরাতন সুন্দরী নামক জারিগানের দলের অভিনেতা ও কর্মকর্তারা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জারিগান ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে জারি গান গেয়ে বেড়াচ্ছে তারা। দর্শকরাও সারা দিচ্ছে বেশ ভালো। জারি গানের শিল্পীরা চায় তাদের দল ধরে রাখতে সরকারি সহায়তা।
শিল্পীদের অভিযোগ, আর্থিক সহযোগিতা না পাওয়ায় শীতের সময়েও আগেরমতো হচ্ছে না জারির আসর। এতে গ্রামীণ ঐহিত্য হারিয়ে যাওয়ার ফলে সমাজে ঘটছে নানা অপ্রতিকর ঘটনা।
ভেলুয়া থেকে আসা জারির শিল্পী মো. শামীম মিয়া বলেন, আমরা আগে শীতের সময় আসলে সিরিয়াল দিবার পাইতাম না। প্রতিদিন কাজ থাকতো। কিন্তু এখন আর আগেরমত কাজ নাই। আমরা এখন অবসর সময় কাটাই। আমাদের একটা জারি গানের আসরে অনেক খরচ হয়। সরকার একটু সাহায্য করলে আমরা এই জারিকে বাচায় রাখতে পারতাম।
৩০ বছর থেকে ভেলুয়ার কবির মিয়া জারি করেন কথা হয় তার সাথে সে বলেন, আমি বিভিন্ন জায়গায় ৩০ বছরে অনেক জারি তুলেছি। কিন্তু এখন আস্তে আস্তে আসর কমে গেছে। কিন্তু মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা কমেনি। মানুষ এখন ফেইসবুক ও ইউটিউবের ফলে এইগুলার আয়োজন কম করে। আর আমরা সরকারিভাবেও কোন সহযোগিতা পাই না। সরকারিভাবে যদি এই জারির আসর করা হতো তাহলে আমাদের কদর থাকতো। এখনকার ছেলেপেলেরা জারি গানের আসর সম্পর্কে জানেই না।
শেরপুর পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জারি গানের আসরের আয়োজক মো. বাবুল মিয়া বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই জারির আসর নতুন প্রজন্মের কাছে এখন দুর্লভ। আগে এলাকায় আয়োজন হতো বেশি বেশি এখন কম হয়। আর এখন গ্রামেও আয়োজন কম হয়। তাই এলাকার সচেতন যুব সমাজ ও স্থানীয়দের নিয়ে হারিয়ে যাওয়া জারির আসর পুনরায় ফিরিয়ে আনতে প্রতি বছর এ আয়োজন করা হবে।

আরও দেখুন

ইসলামপুরে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের উদ্বোধন

ইসলামপুর সংবাদদাতা মঙ্গলবার সারাদেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । …