আজঃ বৃহস্পতিবার | ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
শিরোনাম

বাঁশঝাড়ে একযুগ ধরে শিকলবন্দি মানসিক ভারসাম্যহীন স্বপন

হাফিজুর রহমান লাভলু:
একযুগ ধরে বাঁশঝাড়ে শিকলে বন্দি অবস্থায় জীবন কাটছে মানসিক ভারসাম্যহীন স্বপন বর্মণের (৩৫)। বৃদ্ধা মা আর বাবা কাজ করে অন্যের বাড়িতে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না ছেলে স্বপন বর্মণকে। মেলেনি প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারি কোনো সহযোগিতা। তাই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার বীরবান্দা গ্রামের পবন বর্মণ ও সচিত্রা রানীর ছেলে স্বপন বর্মণ। স্বপন বর্মণের এ পরিস্থিতে চরম বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্র পরিবারটি।

২১ মার্চ সোমবার সরেজমিন গেলে দেখা যায়, স্বপনের হাত আর পায়ে লোহার শিকল। শিকলের অপর পাশ বেঁধে রাখা হয়েছে গাছের সাথে। বাঁশঝাড়ের ঝোপে গাছের সাথে একযুগ ধরে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন হতভাগ্য এই যুবক। দিন রাত আর রোদ বৃষ্টি কিংবা ঝড়ের সময়ও শিকলে বন্দি থাকতে হচ্ছে তাকে।
স্বপনের পরিবার জানায়, স্বপন কৃষি কাজ করে সংসারের হাল ধরেছিল। পরে পার্বতী রানী বর্মন নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে। বিয়ের দু’বছরের মাথায় এক কন্যা সন্তানের বাবা হয় সে। এরপর আবারো মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে সে। মানুষকে কাছে পেলে কামড়াতে যায়। শুরু করে নানা অত্যাচার। তার এই আচরণ সইতে না পেরে লংগরপাড়া বাজার থেকে লোহার শিকল এনে হাত-পায়ে বেঁধে গাছের সাথে আটকে রাখে। ভালো না হওয়ায় তার স্ত্রী পার্বতী রানী বর্মন চলে যায় বাপের বাড়ি। তার মেয়ে প্রীতি রানী বর্মন থাকে দাদা-দাদীর কাছে। এখন সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। প্রতিদিনই তার বাবাকে শিকলে বাঁধা দেখে কেদে ওঠে। রোদ বৃষ্টি কিম্বা ঝড়ের রাতেও বাশঝাড়েই পড়ে থাকতে হচ্ছে তাকে।
স্বপনের মা সুচিত্রা রানী বর্মণ বলেন, মেলা চিকিৎসা করছি। ভালা অয় নাই। অহন আমরাই চলতে পারি না। পোলারে চিকিৎসা করমু কেমনে? স্বপনের বাবা পবন বর্মণ বলেন, পোলারে শিকল দিয়া বাইন্দা রখছি। মায়া লাগে। ছাইড়া দিলে মানষেরে কামড়ায়। স্বপনের মেয়ে প্রীতি রানী বর্মণ কান্না জড়িত কন্ঠে বলে, বাবা পাগল হওয়ায় মা চইলা গেছে। অহন দীদার কাছে থাহি। দীদাও গরিব। পড়ালেহার খরচ দিতে পায় না। স্যার কইছে, আমার কাছে খরচ নিবো না। তবুও জামা কাপড় আর স্কুল ড্রেস কেনার মতো সামর্থ নাই। বাবা ভাল অইলে মা ফিরে আইবো। তহন ভালা লাগবো। আমি সরকারের কাছে বাবার চিকিৎসার সহায়তা চাই।
সাবেক ইউপি সদস্য জাবের হোসেন বলেন, অতি দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে স্বপন বর্মণকে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তবে উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। স্থানীয় এক কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের অধ্যক্ষ জহির রায়হান বলেন, যদি কোনো সুহৃদয়বান ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়, তাহলে হয়তো সুস্থ হবে স্বপন। মেয়েটি ফিরে পাবে মা বাবাকে এমনটাই মনে করেন স্বপনের পরিবারসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
তবে স্বপন বর্মণের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর আর তার মেয়ে প্রীতি রানী বর্মণের পড়ালেখার খরচসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার। তিনি বলেন, তাকে থাকার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী হিসেবে একটি ঘর দেয়া হবে। এছাড়াও তার মেয়ের পড়ালেখার জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।

আরও দেখুন

ইসলামপুরে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের উদ্বোধন

ইসলামপুর সংবাদদাতা মঙ্গলবার সারাদেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । …