আজঃ সোমবার | ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
শিরোনাম

শেরপুরে ঘানি টেনে চলে বেগম-সাজন দম্পতির জীবন

এভাবেই ঘানি টেনে চলে বেগম-সাজন দম্পতির জীবন। ছবি-পল্লীর আলো

হাফিজুর রহমান লাভলু:
গরু কেনার সামর্থ্য নাই। তাই জোয়াল নিজের কাঁধে নিয়ে কাঠের ঘানি টানছেন বেগম ও সাজন মিয়া নামে এক দরিদ্র দম্পতি। ঘানিতে উৎপাদিত সরিষার তেল বিক্রি করেই চলে তাদের সংসার।
জানা যায়, শেরপুরে প্রায় ৩৫ বছর যাবত নিজেরাই ঘানির জোয়াল কাঁধে নিয়ে অনবরত টেনে চলেছেন ওই দম্পতি। সংসারের অভাব-অনটন ঘোঁচাতে সদর উপজেলার পাকুড়িয়া চকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এ দম্পতি গরুর পরিবর্তে নিজেদের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন ঘানির জোয়াল। দুজন মিলে ঘানি টেনে সরিষার তেল ভাঙ্গার পাশাপাশি দু’বেলা দু’মুঠো ডাল-ভাত নিশ্চিত করতে প্রতিদিন ঘানির অবসরে রিক্সাও চালান পঞ্চাশোর্ধ্ব সাজন মিয়া। একটি গরু কেনার সামর্থ না থাকায় জীবন বাঁচাতে প্রতিনিয়তই চলছে তাদের এই সংগ্রাম। তবে বিষয়টি জানতে পেরে ঘানিটি টানার জন্য একটি গরু দেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ।
জানা গেছে, সাজন মিয়া ও বেগম দম্পতির ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তবে তারা সবাই জীবিকার তাগিদে ঢাকায় থাকে। ঢাকায় তারা যে আয় করেন, তা দিয়ে তাদের নিজেদের ঠিকমতো চলে না। এ অবস্থায় সাজন মিয়া ও তার স্ত্রী বেগম শুরু করেন বেগমের বাপ-দাদার পৈত্রিক পেশা ঘানিতে সরিষা ভেঙ্গে তেল উৎপাদনের কাজ। বেগমের মা, বাবা ও দাদা বংশানুক্রমে ঘানিতে সরিষা ভেঙ্গে তেল উৎপাদন করে তা বাজারে বিক্রি করতেন। কোন উপায় না পেয়ে ওই পেশাকে বেছে নিলেও সাজন-বেগম দম্পতি আর্থিক অনটনের কারণে ঘানি টানার গরু বা মহিষ কিনতে পারেননি। তাই স্বামী-স্ত্রী নিজেরা মিলেই ঘানির চাকা ঘুরিয়ে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তেল উৎপাদন করেন। কঠিন জীবনযুদ্ধে পেটের দায়ে মানুষ হয়েও পশুর পরিবর্তে ঘানির জোয়াল কাঁধে নিয়ে অনবরত তাদের নিজেদেরই ঘুরতে হচ্ছে ঘানির চক্রে। সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একটানা ঘানি টেনে ১০ কেজি সরিষা ভাঙ্গতে পারেন তারা। এক হাজার টাকা কেনা ১০ কেজি সরিষা থেকে ৩ লিটার তেল উৎপাদন হয়। আর খৈল উৎপাদন হয় ৬ কেজি। ৪শ টাকা লিটার দরে ৩ লিটার সরিষার তেল ও ৪০ টাকা দরে ৬ কেজি খৈল বিক্রি করে লাভ হয় সাড়ে ৪শ টাকার মতো। তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় এই পরিবারটিকে। তাই বেগমের স্বামী সাজন মিয়া সন্ধ্যার পর প্যাডেলচালিত রিক্সা চালিয়ে আয় করে সংসারের বাকি চাহিদা পূরণ করেন।
সাজন মিয়া জানান, আমরা দুইজন সকাল থাইকা বিকাল পর্যন্ত ঘানি টানি। আর সন্ধ্যার পর ভাড়ায় রিক্সা নিয়া বাইর হই। এই দুইটা মিইলা কষ্ট কইরা কোনমতন চলতাছি। পশুর কাম আমরা করি। কারণ গরু কিনার মতো টাকা তো আর নাই। ৫ বছর আগে এডা গরু কিনছিলাম। পরে অভাবের কারণে বেইচা ফেলছি। এহন বয়স হইয়া যাইতাছে, আগের মতো আর ঘানি টানতে পারি না। খুব কষ্ট হয়। থাহার জন্য ঘরটাও ভাঙা। শ্বশুরের এল্লা জমিনের মধ্যে কোনরকম থাকতাছি। আমগরে যদি কেউ সাহায্য করতো পশুর কামডা আর আমাদের করা লাগতো না। বেগম জানান, আমার দাদা ঘানি টানছে, আমার মা এই ঘানি টানছে। এহন গরু কিনার ট্যাহা-পয়সা নাই বইলা আমিও টানতাছি। আর এত সময় ঘানি টানার পর এহন আমার মা শ্বাসকষ্টসহ অনেক অসুখে পড়ছে। আমরাও আস্তে আস্তে অসুস্থ হইয়া পরতাছি। সরকার যদি একটু সাহায্য-সহযোগিতা করতো খুব উপকার হইতো।
স্থানীয় আবুল কালাম আজাদ বলেন, বেগম-সাজন দম্পতির দীর্ঘদিনের এই কষ্টের লাঘব চান স্থানীয়রাও। অনেকদিন থেকেই দেখতাছি এরা খুব কষ্ট করে ঘানি টানে। একটা গরু না থাকায় গরুর কাজটা স্বামী-স্ত্রী মিলে করতাছে। এটা দেইখা খুব খারাপই লাগে। স্থানীয় খলিল মিয়া বলেন, আমরা এখান থেকে খাঁটি সরিষার তেল কিনি। এতে কোন ভেজাল থাকে না। কিন্তু এরা যেভাবে কাজটা করে, তা খুবই কষ্টদায়ক। কেউ একটা গরু যদি তাদের দিতো, তাহলে তাদের কষ্টটা লাঘব হতো।
এ দিকে বিষয়টি জানতে পেরে তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, আমি বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাগ্রহণ করতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। সেইসাথে তাদের পরিবারের সকল খোঁজ-খবর নিয়েছি। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ে তাদেরকে একটি গরুর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আর পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বলেছি, তাদেরকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে। আশা করছি, তাদের এই দুর্ভোগ আর থাকবে না।

আরও দেখুন

ইসলামপুরে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের উদ্বোধন

ইসলামপুর সংবাদদাতা মঙ্গলবার সারাদেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । …